ইসলাম নারীর ক্ষমতায়ন ও নেতৃত্বের যোগ্যতাকে অস্বীকার করা দূরে থাক বরং
সর্বতোভাবে বিকশিত করে তোলে। অথচ ইসলামবিদ্বেষীদের অন্যতম অভিযোগ হচ্ছে, ইসলাম
নারীকে অবদমিত করে রাখে, নারী নেতৃত্বকে নিষিদ্ধ করে, নারীর ক্ষমতায়নকে অকল্যাণকর
মনে করে।
গোড়াপন্থী ওলামাগোষ্ঠীর নারীবিদ্বেষী মাসলা-মাসায়েলের বিপুল প্রচারের দরুন এ
জাতীয় ধ্যান-ধারণা সকলের মনেই গেড়ে বসেছে। উপরন্তু ইসলামী রাজনৈতিক ও জঙ্গিবাদী
দলগুলো মানবজাতিকে এমনটাই বার্তা দিচ্ছে যে, নারীর উচ্চশিক্ষার প্রয়োজন নেই, কারণ
সংসার সামলানোই তার মূল কাজ। সে ঘরে থাকবে, পরিবারের পুরুষ সদস্য ছাড়া সে বাড়ির
বাইরে যাবে না। তার চুলও দেখা যাবে না, দেখা গেলে তাকে কঠোর দণ্ড ভোগ করতে
হবে।
যার কণ্ঠ শোনাও পাপ, যার হাঁটাচলার স্বাধীনতা নেই, সে আবার নেতৃত্ব দেবে কীভাবে?
এ কারণেই কোনো ধর্মীয় সমাবেশে নারীদেরকে দেখা যায় না, কোনো ধর্মীয় দলের
গুরুত্বপূর্ণ পদে নারীরা থাকে না।
নারী নেতৃত্বকে হারাম ঘোষণাকারীরা সাধারণত কোর’আনের সুরা নিসার ৩৪ নম্বর আয়াতটি
উল্লেখ করেন যেখানে আল্লাহ বলেছেন, ‘পুরুষরা নারীদের তত্ত্বাবধায়ক, এ কারণে যে,
আল্লাহ তাদের একের উপর অন্যকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং যেহেতু তারা নিজদের সম্পদ
থেকে ব্যয় করে।’
এ আয়াতের পূর্বাপর আয়াতগুলো পড়লে বোঝা যায় যে এখানে আল্লাহ মো’মেনদের পারিবারিক
শৃঙ্খলা সম্পর্কে নির্দেশনা প্রদান করছেন। একজন স্বামী তার পরিবারের ভরণপোষণ করে
থাকে। এ কারণে তাকে পরিবারে তত্ত্বাবধায়ক বা কর্তা হিসাবে মানতে হবে। এই আয়াতের
অপব্যাখ্যা করে জাতীয় সামষ্টিক জীবনের সকল অঙ্গনে ‘নারী নেতৃত্বকে হারাম’ বলে
ফতোয়া দেওয়া হচ্ছে।
কিন্তু আমরা যদি এ বিষয়ে প্রকৃত ইসলামের বক্তব্য জানতে চাই, তাহলে আমাদের দৃষ্টি
ফেরাতে হবে আল্লাহর রসুলের জীবনের দিকে। তিনি কোনো দায়িত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে
দেখেছেন কে কোন কাজের যোগ্য, তিনি নারী-পুরুষ দেখেন নি। কোনো নারী যদি কোনো কাজে
পুরুষের চেয়ে যোগ্য হয়, তাহলে সেই কাজ তিনি সেই নারীকেই অর্পণ করেছেন। কেবল নারী
হওয়ার কারণে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তিনি নেতৃত্বভার পাবেন না এমন মূর্খতাপূর্ণ
ধ্যানধারণা ইসলামে নেই।
আল্লাহ নারী ও পুরুষ উভয়কেই তাঁর প্রতিনিধি বা খলিফারূপে সৃষ্টি করেছেন। নারী যদি
তার জ্ঞান, মেধা ও যোগ্যতাবলে সামষ্টিক কর্মকাণ্ডের যে কোন অঙ্গনে নেতৃত্বদানের
উপযুক্ত হয়, সেক্ষেত্রে অবশ্যই তিনি বহু পুরুষের উপরও নেত্রী হিসাবে নিয়োজিত হতে
পারবেন।
ইসলামের ইতিহাসেও নারীর ক্ষমতায়নের বহু উদাহরণ দেখা যায়। যেমন: মদিনায় যুদ্ধাহত সৈনিকদের চিকিৎসার জন্য স্থাপিত হাসপাতালের পরিচালক ছিলেন একজন নারী সাহাবী রুফায়দাহ আসলামিয়াহ (রা.)। মদিনার বাজার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন উম্মে শিফা (রা.)। ইয়ারমুকের যুদ্ধে খাওলা বিনতে আজওয়ার (রা.) একটি বাহিনীর কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন। উটের যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন উম্মুল মো’মেনীন আয়েশা (রা.)। তাঁর কাছ থেকে হাজার হাজার মানুষ ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করেছেন এবং তিনি ২,২১০ টি হাদিসের বর্ণনাকারী ছিলেন। উম্মুল মোমেনীন খাদিজাতুল কোবরা (রা.) অনেক বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতেন। অনেক নারী সাহাবী কোর’আনের হাফেজ ছিলেন এবং কোর’আন সংরক্ষণের ক্ষেত্রে তারা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন।
তবে আল্লাহর বিধানমত কেবল একটি জায়গায় নারী নেতৃত্বের জায়গায় থাকতে পারবে না।
সেটা হলো উম্মতে মোহাম্মদী নামক মহা জাতির এমামের পদ। কারণ আল্লাহ নারী ও পুরুষের
দেহ, আত্মা, চিন্তাশক্তি ও বুদ্ধিমত্তার স্রষ্টা। এদের উভয়ের দুর্বলতা সম্পর্কে
তিনি সবচেয়ে বেশি ওয়াকিবহাল। তিনি জানেন যে, নারীর শারীরিক গঠন যেমন পুরুষের
তুলনায় কোমল, তার হৃদয়ও পুরুষের তুলনায় সংবদেনশীল। সহজইে তার চিত্তচাঞ্চল্য ঘটে।
তাকে প্রভাবিত করা সহজতর। এ কারণে ইবলিস নারীকেই প্রথম আল্লাহর হুকুম থেকে
সরিয়েছিল। এ কারণেই আল্লাহর অগণ্য নবী-রসুলের মধ্যে একজনও নারী নেই।
সুতরাং পৃথিবীময় উম্মতে মোহাম্মদী নামক যে মহাজাতি হবে সেই মহাজাতির ‘এমাম’ কেবল
নারী হতে পারবেন না। এর বাইরে স্বীয় যোগ্যতাবলে অন্যান্য যে কোন পর্যায়ের
নেতৃত্বের দায়িত্ব নারী পালন করতে পারে। হেযবুত তওহীদ যেহেতু প্রকৃত ইসলাম প্রচার
করছে, তাই এ আন্দোলনের এমাম জনাব হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম বহু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব
নারীদের উপর অর্পণ করেছেন। সে দায়িত্বগুলো নারীরা সফলতার সাথে পালন করে যাচ্ছেন
এবং নিজেদের যোগ্যতা ও উপযুক্ততার প্রমাণ দিয়ে যাচ্ছেন।
মন্তব্য করুন এখানে